✒️শাকিল আহমেদ
২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর, বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পরপরই ছাত্র জনতার এই আন্দোলন শুরু হয়।
ছাত্র জনতার আন্দোলন চলমান পরিস্থিতিতে ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী (সাবেক)সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্যে বলেন কোটা বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। মামলার পর আদালত যে রায় দিয়েছেন এতে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। আদালতেই সমাধান হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা(সাবেক) পাল্টা প্রশ্ন করেন "মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?
শেখ হাসিনার ওই এক বাক্যেই খেলা শুরু এবং ১৫ বছর সরকারের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনার পদত্যাগ হয়।
শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যে আন্দোলনকারী ছাত্র সমাজের মধ্যে ধারণা হয়, প্রধানমন্ত্রী (সাবেক)ছাত্র জনতাকে রাজাকার "ট্যাগ" দিয়েছেন। তারপর আন্দোলন আরও বড় ধরনের রুপ নেয়।
১৪ জুলাই রাতে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল গুলো। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মাঝে "আমি কে? তুমি কে? রাজাকার রাজাকার"চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার, কে বলেছে? কে বলেছে? সরকার, সরকার’ ইত্যাদি স্লোগানমুখর।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো "সমন্বয়ক" গঠন করে কোটা সংস্কার আন্দোলন/বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। সর্বশেষ আবু সাঈদ,মুগ্ধ, ছোট বাচ্চাসহ এবং ১ দফা আন্দোলনকারী, ছাত্র জনতা, জনসাধারণসহ দুই শতাধিক (নিহতর সংখ্যা বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে)জীবন বিসর্জনের বিনিময়ে এবং ছাত্র জনতা, জনসাধারণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী শত শত আহতদের বিনিময়ে ৩৬শে জুলাই (০৫ আগস্ট ) সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন এবং ছাত্র জনতারা স্বাধীন দেশকে আবারও স্বাধীন করেছেন।
এবার আসা যাক সমন্বয়ক বিষয়েঃ
সমন্বয়কঃ যিনি জ্ঞান ও কর্মের মধ্যে, বিভিন্ন বিভাগের/ কর্মপ্রচেষ্টার মধ্যে অথবা বিভিন্ন কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন, তাকে সমন্বয় সাধনকারী/সমন্বয়কারী বা সমন্বয়ক বলে।
কোটা সংস্কার আন্দোল/বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করতে, বিভিন্ন ধরনের দাবি এবং সর্বশেষ ১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেগুলো "সমন্বয়ক"গঠন করে আন্দোলনের নেতৃত্বসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন।
ন্যায়পরায়ণ ও সাহসী ছাত্র জনতা, রক্তক্ষয়ী আসল সমন্বয়কযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকার কারণে আজ স্বাধীন দেশকে আবারও স্বাধীন করা সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু ইদানীং বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে যে, কিছু স্বার্থন্বেষী মহল "সমন্বয়ক" শব্দটি বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি,স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করছেন।
এতে করে বিভিন্ন ধরনের সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও জনসাধারণ বিভিন্ন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতেছেন এমনকি "সমন্বয়ক" বলে চাঁদাবাজিরও কথা শোনা যাচ্ছে ।
এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে "সমন্বয়ক" শব্দটি একসময় ভয়ংকর রুপে পরিনত হতে পারে।
সুতরাং বিষয়টি বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন/বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নির্যাতিত রক্তক্ষয়ী আসল সমন্বয়কযোদ্ধাদের ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সেই সাথে স্থানীয় প্রশাসন এবং সচেতন জনসাধারণের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। নইলে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে ১৮ কোটি জনগণ মধ্যে ১২ কোটি সমন্বয়কের রুপ ধারণ করতে পারে।
আসুন সবাই মিলে অন্যায় ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠনে এগিয়ে আসি।
কারণ "পরিবারটা যেমন আমার ঠিক দেশটাও আমার"
শাকিল আহমেদ
(সহকারী নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক পরিবেশ,রংপুর)