পরিবেশ প্রতিবেদক
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ শিশুদের অধিকার রক্ষায় এবং তাদের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিশু ও যুব ফোরামের মাধ্যমে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে:
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ: স্থানীয় সম্প্রদায়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। শিশু ফোরামের কর্মএলাকার ১০ টি গ্রামে বিগত ১ বছরে কোন বাল্যবিবাহ হয়নি এবং অন্যান্য এলাকায় এবছর ৩ টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে বিরল শিশু ও যুব ফোরাম।
শিশুশ্রম প্রতিরোধ: শিশুদের শ্রমের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শিশুর সুরক্ষা: শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বিনামূল্যে পাঠদান কেন্দ্র ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো বিনামূল্যে পরিচালিত পাঠদান কেন্দ্র, যা গ্রামীণ শিশুদের জন্য একটি আলোকিত ভবিষ্যতের দুয়ার খুলে দিয়েছে। শিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শীতবস্ত্র প্রদান এবং ঈদ সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে তাদের জীবনের মান উন্নয়নে সাহায্য করা হচ্ছে।
বিরলে ১০টি গ্রামকে ইকো ভিলেজ এবং বাল্যবিবাহ মুক্ত গ্রাম ঘোষণা করা হয়েছে। এসব গ্রামে গত এক বছরে কোনো বাল্যবিবাহ হয়নি, যা স্থানীয় সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।
স্থানীয় জনগণের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ চুলার ব্যবহার জ্বালানির অপচয় কমাতে সহায়তা করছে। এই বিশেষ চুলাগুলি কম কাঠ ব্যবহার করে বেশি তাপ উৎপাদন করে, ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের সাশ্রয় হচ্ছে এবং স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও উপকারিতা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের বাড়ির ছাদে ঝুলন্ত বাগান তৈরি করে সবজি চাষ করতে পারছেন। এই পদ্ধতি তাদের খাবারের যোগান দেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কৃষির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকদের জন্য কেচো কম্পোস্ট সার তৈরির কার্যক্রম একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই সারটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করছে।
শিশু ও যুব ফোরামগুলির মাধ্যমে মাশরুম চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা যুবকদের জন্য একটি আয়ের উৎস তৈরি করছে। মাশরুম চাষে কম খরচে ভালো মুনাফা পাওয়া সম্ভব, ফলে তারা আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারছেন।
এছাড়া, মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা শারীরিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করছে। এই প্রশিক্ষণ তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করছে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং কমিউনিটির সহায়তায় ফোরামগুলি সাফল্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। তাদের উদ্যোগগুলোর ফলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে। বিরল এপি যুব ফোরামের সভাপতি মো: শাহরিয়ার নাজিম জয় বলেছেন, “মানুষ হিসেবে আমরা পৃথিবীতে না থাকলেও আমাদের সৎকর্ম অমর হয়ে থাকবে।” তিনি যুবকদের প্রতি আহ্বান জানান যে, প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও উদ্ভাবনী ধারণার মাধ্যমে শিশু ও পরিবেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।
শাহরিয়ার বলেন, “যুব সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণই পারে সমাজের চিত্র পাল্টে দিতে।” যুব ফোরামের কার্যক্রম স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করছে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিরল শিশু ও যুব ফোরামের এই উদ্যোগগুলি শুধুমাত্র পরিবেশ সুরক্ষায় নয়, বরং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের এই ধরনের কার্যক্রম দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি আদর্শ উদাহরণ।
কপিরাইট © ২০২৪ (দৈনিক পরিবেশ) সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Leave a Reply