মিঠাপুকুর প্রতিনিধি
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার যমুনেশ্বরী নদীর তীরে বালুর মহল থেকে বালু উত্তোলন করে প্রতিনিয়ত বালু ভর্তি ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক চলাচলে জনসাধারণ চরম দুর্ভোগে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চলমান বালু উত্তোলনের কারণে আবাসিক এলাকার চলাফেরার রাস্তা নষ্ট, দুর্ঘটনার পাশাপাশি পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত এবং জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় এলাকাবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়েছে।
বালু মহলটি বন্ধের দাবিতে ০৪ জানুয়ারি দুপুর ৩: ৩০ মিনিটে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বালুয়ার চৌরাস্তার মোড়ে অবরোধ মানববন্ধন করেছে।
উপজেলার ১২ নং মিলনপুর ইউনিয়নের তরফসাদী গ্রামে বালু মহলটি অবস্থিত তরফসাদী মৌজার দাগ নং- ১৭৮ একর ৪৫ জমিতে তরফসাদী গ্রামে বালুমহাল অবস্থিত। ০১/৪/২০২৩ ইং রংপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা বালু মহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো: হামিদুর রহমান এর সাক্ষরিত এক ইজারা বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক সরকার নির্ধারিত কাঙ্খিত ৬৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। স্থলে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকায় ভ্যাট সহ দরপত্র দাখিলে তরফসাদী বালু মহালের ইজারা গ্রহন করেন।
সে মোতাবেক বর্ণিত ইজারা ০১ লা বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা সন হতে ৩০ চৈএ হতে এই বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন শুরু হয়। বালুয়া মোড় থেকে তরফসাদী হয়ে প্রায় আড়াই কিলোমিটার নদী পর্যন্ত গ্রামের ছোট রাস্তায় বালু বোঝাই ভারি ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক চলাচলের কারণে দূর্ঘটনা দিন-দিন বেড়েই চলছে সেই সাথে গ্রামীন পাকা-কাঁচা সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিগত দিনে গ্রামবাসী ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক বন্ধের জন্য আন্দোলন, মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে।ইজারার সুযোগ নিয়ে বালু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা লীজকৃত জায়গার বাইরে বালু উত্তোলন করছে। ইজারা বন্ধ না করা হলে এই বালুখেকো সিন্ডিকেট থেকে এলাকাবাসী রক্ষা পাবে না।
বালু বহনে ট্রাক-ট্রপি চালানোর অসুবিধার জন্য সরকারপক্ষের নিকট ইজারাদার কোনো ওজর-আপত্তি উত্থাপন করতে পারবে না।
এলাকাবাসী বালু মহাল ইজারদারকে মৌখিকভাবে নীতিমালা মেনে বালু উত্তোলনের কথা বললেও কোন খুঁটির বলে তিনি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক দিয়ে দেদারসে বালু পরিবহন করছেন। নীতিমালা অনুযায়ী গ্রামের রাস্তা ও পরিবেশ রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর স্বাক্ষলিপি প্রদান করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে স্থানে বালু ইজারা দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে অনেক দূরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, এতে করে নদীভাঙন, ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বালু বোঝাই ভারি ডাম্প ট্রাক চলাচল বন্ধ সহ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সংশ্লিষ্ট ইজারাদার রাতের-আঁধারে অপরিকল্পিত অবৈধ ভাবে বালুর গাড়ি চলাচল বন্ধ করার দাবি ও পরিবেশ রক্ষার্থে সচেতন এলাকাবাসী গনসাক্ষর দিয়েছেন।
বালুঘাটের অসংখ্য অবৈধ ট্রলি সহ ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক প্রতিদিন ও রাত প্রায় ২৪ ঘন্টাই বিরামহীনভাবে চলাচল করে আসছে। এতে উক্ত রাস্তা দিয়ে এলাকাবাসীর ছোট ছেলে-মেয়ে সহ সকল বয়সের সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ও নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং পথচারিরা সবসময় নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে নদীতে বালু উত্তোলন চলছে। এতে নদীর ভাঙন দিন দিন বেড়ে চলেছে। বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজারো মানুষ। স্থানীয় এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বালু উত্তোলনের কারণে আমাদের রাস্তার পাশে ঘরবাড়ি ফাটল দেখা দিচ্ছে। ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। এই দুর্বিষহ অবস্থার হাত থেকে রক্ষা পেতে চাই।”
এই এলাকার মধ্য দিয়ে এই রাস্তায় বালুঘাটের ট্রলি ও ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক চলাচলের চাপে এলাকাবাসীর বহুল কাঙ্খিত পাঁকা রাস্তার বেহাল দশা হয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে পরেছে বালুর স্তুপ জমে মানুষজন ,ভ্যান,সাইকেল,মোটরসাইকেল চলাচলে প্রায়শই স্লিপ করে দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
এমতাবস্থায় জন- মানুষের সুরক্ষার স্বার্থে উক্ত বালুঘাটে ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে ও রাত্রিকালীন বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশু প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এলাকাবাসীদের গনসাক্ষরকৃত আবেদন দাখিল করা হয়েছে।