
পরিবেশ প্রতিবেদক
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার কানুদাসপাড়ায় ঘটে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। একটি বাড়িতে লাগা ভয়াবহ আগুনে ঘর পুরোপুরি রক্ষা পেলেও তিনটি পরিবারের বড় বড় খড়ের গাদা ও মূল্যবান জিনিসপত্র সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল বিপুল, তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি ছিল তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলা।
পরদিনই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সরকারি সহযোগিতার জন্য আবেদন করেন। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন সমাজকর্মী ও সাংবাদিক মেহেদী হাসান মুরাদ। তার ভাষ্যে, “আমি তাদের পাশে থেকেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্নে সহযোগিতা করি। আশাবাদী ছিলাম দ্রুতই কিছু সাহায্য আসবে। কিন্তু এক মাস, দুই মাস—সময় পেরিয়ে যাচ্ছিল, সহায়তা আসছিল না।”
এই বিলম্বে হতাশ হন পরিবারের সদস্যরা। পরবর্তীতে আবার বিষয়টির খোঁজ নিতে গিয়ে মুরাদ জানতে পারেন, আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন থাকলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এরপর কিছু যোগাযোগ ও উদ্যোগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হাতে অবশেষে পৌঁছে যায় কাঙ্ক্ষিত অনুদান।”
ভুক্তভোগী পরিবারের এক সদস্য বলেন, “অনেক কষ্টে দিন চলেছে এতদিন। খড়ের গাদা চলে যাওয়ার পর গরু-পালনের পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। এখন একটু আশার আলো দেখছি।”
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জনাব মো: মনিরুজ্জামান সরকার। তিনি বলেন,
যেকোনো দুর্যোগে সরকারের পক্ষ থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জনগণের পাশে দাঁড়ায়। মিঠাপুকুর উপজেলায় উক্ত অগ্নিকান্ডের পরপরই আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। সহায়তা প্রদানের জন্য নির্ধারিত প্রশাসনিক ধাপগুলো অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করেছি। পরিবারগুলো যেন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করাই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
এ সময় সরকারি সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিকাশ চন্দ্র বর্মণ নিজে উপস্থিত থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হাতে সহায়তা তুলে দেন। তিনি বলেন, “একটি দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের পরপরই প্রশাসনের দায়িত্ব দ্রুত সাড়া দেওয়া। আমরা শুরু থেকেই বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও যাচাই-বাছাই শেষে যত দ্রুত সম্ভব সহায়তা প্রদানে উদ্যোগ নিই। মাঝখানে কিছু প্রশাসনিক ধাপ ও যাচাই প্রক্রিয়া থাকায় সময় লেগেছে, তবে তা যাতে পরিবারগুলোর প্রাপ্য অধিকার প্রাপ্তিতে বাধা না হয়—সেই নিশ্চয়তা আমরা দিয়েছি। ভবিষ্যতেও মিঠাপুকুরে এমন যে কোনো দুর্যোগে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সহায়তা পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
আরো উপস্থিত ছিলেন মিঠাপুকুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান টিটুল লর্ড,মিঠাপুকুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, মেহেদী হাসান রিপুল, মানবাধিকার কর্মী আশিকুর রহমান মন্ডল এবং সাংবাদিক রায়হান কবির প্রধান প্রমুখ।
যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু প্রশাসনিক ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে, তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার আন্তরিকতায় অবশেষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সহায়তা পেয়েছে—এটি আশাব্যঞ্জক। ভবিষ্যতে এমন ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব সবাইকেই নিতে হবে—প্রশাসন থেকে শুরু করে আমাদের সমাজের সচেতন মানুষদেরও।
Leave a Reply