রিয়াদুন্নবী রিয়াদ বিশেষ প্রতিনিধি
স্বামী মো. নূর ইসলাম খান একটি দোকানে সামান্য বেতনে কাজ করতেন। সংসার চলত অনিশ্চয়তায়। ঠিক তখনই তিনি যুক্ত হন নারী উন্নয়ন সমবায় প্রকল্পের আওতায় ‘উন্নত জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পে। উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সহায়তায় সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণ পান তিনি।
মাত্র দুটি গরু নিয়ে যাত্রা শুরু। ধীরে ধীরে সেই খামারে গরুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২২ টি। করোনার পর বর্তমানে খামারে আছে ১১টি গরু। প্রতিদিন উৎপাদিত হয় প্রায় ১০০ লিটার দুধ। দুধ বিক্রির পাশাপাশি বাছুর বিক্রির মাধ্যমেও আয় হয়। খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও গবাদিপশুর রোগবালাই চ্যালেঞ্জ হলেও প্রতি মাসে গড়ে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ করছেন তিনি।
এই আয়ে কাজলী খাতুন নির্মাণ করেছেন আধাপাকা ঘর, মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে, ছেলেকে পড়াচ্ছেন উচ্চমাধ্যমিকে, আর নিয়মিত করছেন ব্যাংকে সঞ্চয়। তিনি বলেন,প্রথমে খুব ভয় পেয়েছিলাম। ভাবতাম পারব না। কিন্তু ধীরে ধীরে সাহস পেয়েছি। এখন মনে হয়,পরিশ্রম আর মনোবল থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।
প্রতিদিন গঙ্গাচড়া মিল্ক ভিটায় দুধ সরবরাহ করেন কাজলী খাতুন। তাঁর খামার এখন শুধু একটি ব্যবসা নয়—এটি হয়ে উঠেছে আশপাশের নারীদের প্রেরণার উৎস।কাজলীর প্রতিবেশী সুফিয়া খাতুন বলেন, ওকে দেখে আমরাও সাহস পেয়েছি। আমিও একটি গরু কিনেছি। আশা করি কাজলীর মতো আমিও একদিন সফল হব।
প্রকল্প চলাকালে গজঘন্টা নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতির সদস্য ছিল ১১০ জন, গঙ্গাচড়া নারী উন্নয়ন সমবায়ের সদস্য ছিল ১০৭ জন। মোট ২১৭ জন নারী পেয়েছেন সাফল্য। কিন্তু ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা আর নবায়ন হয়নি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আলতাবুজ্জামান চয়ন বলেন ,প্রকল্পটি চালু থাকলে গঙ্গাচড়ার মতো নদীভাঙনপ্রবণ এলাকায় আরও শত শত নারী গবাদিপশু পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারতেন। কাজলী খাতুন হচ্ছেন এর সফল উদাহরণ। আমরা চাই এমন প্রকল্প আবার শুরু হোক, যাতে আরও নারীর জীবনে পরিবর্তন আনা যায়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, এমন নারীরা আমাদের সমাজের অনুপ্রেরণা। উপজেলা প্রশাসন নারীদের প্রশিক্ষণ, ঋণ ও বাজার সহায়তায় পাশে আছে ও থাকবে।
কপিরাইট © ২০২৪ (দৈনিক পরিবেশ) সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Leave a Reply