মমিনুল ইসলাম রিপন রংপুর।।
শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে রংপুরে স্মরণকালের কঠোর আন্দোলন করেছে কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা। বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পুলিশ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আবু সাঈদ (২৫) নামে এক বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষার্থী মারা গেছেন। এনিয়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাথে কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনকারীদের মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকেল ৪টা পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। পুলিশ আন্দোলন দমনে টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশসহ শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়।
জানা যায়, দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয় গেটের সামনে এসে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এরপর তারা মর্ডাণ মোড়ের দিকে এগিয়ে যেতে ধরলে পেছনে মিছিলের মাঝামাঝি থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের তর্ক হয়। এতে করে আন্দোলনকারীরা সামনে না গিয়ে আবার বিশ^বিদ্যালয়ের গেটের সামনে ফেরত এসে বিক্ষোভ করে। ভেতরে বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে আন্দোলনকারীরা বিশ^বিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরিস্থিতি বেগতিক হলে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবু সাঈদ মারা যায়। এদিকে পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে তাদের একটি গ্রুপ মর্ডাণ মোড়ের দিকে এবং একটি গ্রুপ পার্কের মোড়ের দিকে অবস্থান করে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে এরই মধ্যে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পার্কের মোড়ে চলে আসে। এ সময় বিশ^বিদ্যালয়ের ভেতর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর লাঠিসোটা, দাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে। পুলিশও লাঠি চার্জ করে ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। আন্দোলকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের মাঝে ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। এতে করে বিশ^বিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে পুলিশ, আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে পলিকেটনিকের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী যোগ দেয়। আন্দোলকারীরা বিশ^বিদ্যালয়ের গেটের সামনে অবস্থা নিয়ে নিহত শিক্ষার্থীদের হত্যাকারীদের বিচারের দাবী জানিয়ে আসছিলো
ওদিকে বিকেল ৫টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে শিক্ষার্থীরা লাশ নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তারা কাচারী বাজার আসলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাশ নিয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীরা কাচারী বাজারে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এর এক পর্যায়ে আন্দোলকারীরা মিছিল নিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের আন্দোলনে যোগ দেয়। কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মারমুখী অবস্থানের কারণে বিশ^বিদ্যালয় এলাকায় পুলিশ, সাংবাদিক কেউ যেতে পারছে না।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেন, কোটা পদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনের পরিস্থিতি এখনও ভাল নেই। শিক্ষার্থীরা মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধসহ হামলা করা হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজিবি ফোর্স চেয়েছি।
কপিরাইট © ২০২৪ (দৈনিক পরিবেশ) সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Leave a Reply