মমিনুল ইসলাম রিপন রংপুর।।
রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বোরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল ৯টায় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামে জাফরপাড়া মাদরাসা মাঠে তার নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় আবু সাঈদকে। জানাজায় ইমামতি করেন আবু সাঈদের আত্মীয় সিয়াম মিয়া। এসময় জানাজা ও দাফনকার্যে মানুষের ঢল নামে।
এর আগে মঙ্গলবার রাত সোয়া ২টার দিকে আবু সাঈদের মরদেহ তার গ্রামে এসে পৌঁছে। মরদেহ গ্রামে পৌঁছালে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। শোক আর কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে যায়। সেখানে অপেক্ষমান শত শত মানুষ মেধাবী আবু সাঈদের এমন মৃত্যুতে ডুকরে ডুকবে কাঁদতে থাকেন।।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। তিনি পেশায় একজন দিনমজুন। অর্থাভাবে কোনো ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তিনি। আবু সাঈদ ছোট থেকেই ছিল অত্যন্ত মেধাবী। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিল সাঈদ। তাকে ঘিরে আকাশসম স্বপ্ন ছিল দরিদ্র বাবা-মার।
আবু সাঈদকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির। কারণ সাঈদ তার নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এতদূর পর্যন্ত এসেছিল। মেধা ও আচরণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিল সাঈদ।সেই ছেলেকে হারিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে শোকে পাথর হয়ে গেছেন মা মনোয়ারা বেগম।
জানা গেছে, ছোট থেকেই আবু সাঈদ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তার ব্যবহারে তার প্রতি সবাই মুগ্ধ ছিল। তিনি স্থানীয় জুনুদের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। পরে এলাকার খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। এরপর রংপুর সরকারি কলেজ থেকেও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন আবু সাঈদ। বেঁচে থাকলে আবু সাঈদ জীবনে অনেক বড় হতেন এবং পরিবারসহ এলাকার জন্য যথেষ্ট অবদান রাখতেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকায় থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার সেলসহ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ত্রিমুখী এ সংঘর্ষে মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেয়া আবু সাঈদ নিহত হন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, মঙ্গলবার দুপুরে বেরোবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন আবু সাঈদ। এই আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। এ কারণে মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলী বলেন, এক শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এ ছাড়া আহত অবস্থায় আরও অনেকেই এসেছে। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে নিহত শিক্ষার্থী হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা গেছেন।
কপিরাইট © ২০২৪ (দৈনিক পরিবেশ) সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Leave a Reply