আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির আশীর্বাদপুষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বী সাঈদ জালিলির চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছিলেন সংস্কারবাদী আইনপ্রণেতা। হৃদ্রোগবিষয়ক সার্জন থেকে এখন তিনি দেশটির ১৪তম প্রেসিডেন্ট। তার এ জয় সামাজিক স্বাধীনতা ও বাস্তবধর্মী পররাষ্ট্রনীতি প্রত্যাশী ইরানের কোটি কোটি মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
জনগণের ভোটে নির্বাচিত পেজেশকিয়ান পেয়েছেন এক কোটি ৬৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪০৩ ভোট। অন্যদিকে, সাবেক প্রধান পরমাণু আলোচক সাঈদ জালিলির প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা এক কোটি ৩৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৭৯।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাসুদ পাজেশকিয়ান এমন একজন ব্যক্তি, যাকে বিশ্বশক্তি স্বাগত জানাবে। তাদের আশা থাকবে, পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের যে উত্তেজনা চলছে সেটি সমাধানে তিনি শান্তিপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করবেন।
মাসুদ পেজেশকিয়ানের বয়স ৬৯ বছর। ইরানের পার্লামেন্টে ২০০৮ সাল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। ইরানের প্রধান সংস্কারপন্থী জোট তাকে সমর্থন দিয়েছে। সাবেক দুই সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি ও হাসান রুহানিরও সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
ইরানে রয়েছে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা। ক্ষমতার মূল কেন্দ্রে রয়েছেন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা। পারমাণবিক কার্যক্রম ও মধ্যপ্রাচ্যে সশস্ত্র যোদ্ধাদের সহায়তা নিয়ে ইরানের যে নীতি রয়েছে সেটি বদলে ফেলার খুব বেশি ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের নেই। কারণ, প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রাষ্ট্রের সব বিষয় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে নীতি পরিবর্তনে প্রভাব রাখতে পারবেন। এ ছাড়া আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উত্তরাধিকারী নির্বাচনের বিষয়টিও খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করবেন তিনি।
মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরানের দেশটির পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের বাসিন্দা। তিনি ১৯৫৪ সালে মাহাবাদ শহরে জন্ম নেন। তার বাবা ইরানি-আজেরি ও মা ইরানি-কুর্দি। পেজেশকিয়ান জেনারেল মেডিসিনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি যখন মেডিকেলের তরুণ ছাত্র, তখন পাহলভি শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবীদের দলে ভিড়েছিলেন।
১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মাসুদ পেজেশকিয়ান তার স্ত্রী ফাতেমা মাজেদি এবং এক কন্যাকে হারান। তবে এরপর আর কখনো বিয়ে করেননি তিনি। একাই তার দুই ছেলে ও আরেক মেয়েকে বড় করেন।
মাসুদ পেজেশকিয়ান ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। তার ওপর দায়িত্ব ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসাকর্মীদের মোতায়েন করার। ১৯৯৪ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও এক সন্তান হারান তিনি। পরে আর বিয়ে করেননি। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়েই এখন বেঁচে থাকা তার।
প্রেসিডেন্ট খাতামির শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন পেজেশকিয়ান।
ইরানের পার্লামেন্টে ২০০৮ সাল থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় তাবরিজ শহরের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি। পেজেশকিয়ান ২০১৩ এবং ২০২১ সালেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ২০১৩ সালে তিনি হাসেমি রাফসানজানিকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এবং ২০২১ সালে গার্ডিয়ান কাউন্সিল তার প্রার্থিতা বাতিল করে।
২০২২ সালে পেজেশকিয়ান মাশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা দাবি করেন। হিজাবসংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া মাশা আমিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মারা যান। এ ঘটনায় দেশজুড়ে কয়েক মাস ব্যাপক বিক্ষোভ চলে।
ইরানের ক্ষমতা বেশ কয়েক বছর ধরে রক্ষণশীলদের হাতে রয়েছে। তবে পেজেশকিয়ান মনোনয়ন পাওয়ায় সংস্কারপন্থিরা আশার আলো দেখছেন। নির্বাচনেও তার ফলাফলি প্রতিফলিত হয়েছে।
কপিরাইট © ২০২৪ (দৈনিক পরিবেশ) সম্পাদক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Leave a Reply